ফেনী প্রতিনিধি
ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের নির্বিচারে গুলিতে নিহতের ঘটনায় নতুন করে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এনিয়ে পৃথক তিনটি হত্যা মামলায় ফেনী-২ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীকে প্রধান করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ ৯৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে।গত বুধবার দিবাগত রাতে মহিপালে নিহত শিক্ষার্থী ছাইদুল ইসলামের বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ৯৪ জনের নাম উল্লেখ ও আরও ১০০-১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ফেনী মডেল থানায় এ হত্যা মামলা দায়ের করেন। নিহত ছাইদুল ফেনী সদর উপজেলার উত্তর ফাজিলপুর কলাতলী গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে। ফেনী মডেল থানা পুলিশের ওসি মুহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজন বাদী হয়ে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছেন। এ বিষয়ে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মামলায় জেলার অন্তত ৩০ জন জনপ্রতিনিধিকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন ফেনী সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল, ফেনী পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান করিম উল্লাহ বিকম ওরফে রেন্সু করিম, যুবলীগ নেতা জিয়া উদ্দিন বাবলু, শর্শদি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি জানে আলম, ধলিয়া ইউপির চেয়ারম্যান আনোয়ার আহমদ মুন্সী, ফেনী পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক আশরাফুল ইসলাম মোহন প্রকাশ কালা মোহন, জেলা যুবলীগের সভাপতি ও দাগনভূঞা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন, ফাজিলপুর ইউপির চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুল হক রিপন, পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক লিটন, ফেনী পৌরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমির হোসেন বাহার, ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর লুৎফুর রহমান খোকন হাজারী, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তোফায়েল আহমেদ তপু, সোনাগাজীর মঙ্গলকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বাদল, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবদুল মোতালেব রবিন প্রমুখ। এর আগে মঙ্গলবার মহিপালে নিহত শিক্ষার্থী জাকির হোসেন শাকিলের মা কোহিনূর আক্তার বাদী হয়ে ৭১ জনের নাম উল্লেখ ও আরও ১৫০-২০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ফেনী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গত সোমবার দিবাগত রাতে নিহতদের মধ্যে অটোরিকশাচালক মো. সবুজের ভাই মো. ইউসুফ বাদী হয়ে ৬৫ জনের নাম উল্লেখ ও আরও ৪০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ফেনী মডেল থানায় আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ছাত্রদের দিকে গুলি করার নির্দেশনা ও অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগে নিজাম হাজারীকে মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে। গত ৪ আগস্ট অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর মহিপাল এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিলেন আন্দোলনকারীরা। একইসময়ে শহরের ট্রাংক রোডে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দুপুর ২টার দিকে মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মহিপাল ফ্লাইওভারের দিকে এগোতে থাকলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এ সময় মুহুর্মুহু গুলি, ককটেল বিস্ফোরণে চারপাশ প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। বিকেল ৫টা পর্যন্ত থেমে থেমে সেখানে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে মহিপালের পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হওয়া ছাড়াও ইটপাটকেলের আঘাতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, পথচারী ও সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নয়জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata